ব্লগ থেকে ইনকাম করার একটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হলো গুগল এডসেন্স। গুগল এডসেন্স হলো গুগুল এর নিজস্ব বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্ম থেকে আপনি ইচ্ছে করলেই খুব সহজেই রোজগার করে নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে এডসেন্স এপ্রুভাল এর নিয়মাবলী মেনে আগে আবেদন করতে হবে।
তবে ব্লগিং শুরু করলেই যে আপনার ব্লগ-এ বিজ্ঞাপন শুরু হয়ে যাবে তা নয়। এর জন্য আপনাকে গুগল এডসেন্স এর এপ্রুভাল নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ এর জন্য এডসেন্স এর এপ্রুভাল পেতে হলে কয়েকটি বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। আজ মূলত AdSense approval rule গুলো নিয়ে আলোচনা করবো
অ্যাডসেন্স এ আবেদনের পূর্বে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে : এডসেন্স এপ্রুভাল এর নিয়মাবলী
১। কন্টেন্ট এর ধরন:
অ্যাডসেন্স এ আবেদন করার পূর্বে সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনি কি ধরনের কনটেন্ট প্রকাশ করছেন। অবশ্যই কন্টেন্ট হতে হবে কপি পেস্ট বিহীন, কপি রাইট মুক্ত অথবা পাইরেট কিছু না এমন বিষয় নিয়ে হওয়া বাঞ্ছনীয় । অরিজিনাল কনটেন্ট ছাড়া সাইটে গুগল এডসেন্স কখনোই অ্যাড সরবরাহ করতে চায়না এবং আপনার কনটেন্ট অবশ্যই ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি হতে হবে।
আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আপনার সাইটে কোন ভাবেই কপিরাইট ছবি ব্যবহার করবেন না।এছাড়া পর্নোগ্রাফি, হ্যাকিং-ক্রাকিং, গেম্বলিং বা অবৈধ কিছু নিয়ে লেখা আর্টিকেল সাইটে পাবলিশ দেওয়া থেকে বিরত সোজা কথায় স্বাভাবিক নিয়মে আপনি যদি ব্লগ কনটেন্ট লিখতে থাকেন তাহলে সহজেই আপনি গুগল অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পেয়ে যাবেন।
২. কোয়ালিটি রিসোর্স কনেন্টঃ
ওয়েবসাইট বা ব্লগে আপনি লিখছেন আপনার ইউজারকে তথ্য দিয়ে স্যাটিসফাই করার জন্য। তাই অবশ্যই লেখা গুলো হতে হবে ইনফরমেটিভ এবং আপনার কনটেন্ট তখনই ভালো কনটেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে যখন ইউজার সেটিকে ভালো হিসেবে বিবেচনা করবেন।ইউজার পড়ে মজা পাবেনা, তাদের লাগবে না এমন কন্টেন্ট কখনোই ব্লগের জন্য সহায়ক হবে না।
অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পাওয়ার অন্যতম উপাদান হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটে কোয়ালিটির কনটেন্ট। তাই অন্যান্য টিপস টেকনিক ব্যবহার করার আগে অবশ্যই কনটেন্ট এর উপর আপনাকে কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে।
৩। সাইটের ডিজাইন এবং ন্যাভিগেশনঃ
কনটেন্টের সাথে সাথে সাইটের ডিজাইনটি অনেক গুরুত্তপুর্ণ। আপনার ওয়েবসাইট আপনার দক্ষতার প্রমাণ রাখে তাই ওয়েবসাইটটিকে এমন ভাবে সুন্দর করে সাজান যাতে করে একটি প্রফেশনাল লুক আপনার ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশ পায়। কখনই এমন যেন না হয় যে আপনার ওয়েবসাইট দেখে মনে হয় এটি একদমই নূতন এবং under-construction ওয়েবসাইট। কারন গুগল এডসেন্স কখনোই under-construction ওয়েবসাইটকে অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল দেয় না। তাই অবশ্যই AdSense approval rule মেনে চলবেন।
অতিরিক্ত পরিমাণে উৎকট কালার ব্যবহার করবেন না এবং অতিরিক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড কালার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকবেন। তার কারণ প্রচন্ড কালারফুল ওয়েবসাইট ৯০% কিন্তু অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পায় না। এছাড়াও খেয়াল রাখবেন আপনার সাইটের নেভিগেশন লেভেল যেন খুব সহজ হয় এবং লিংক স্ট্রাকচার যেন খুব স্ট্যান্ডার্ড টাইপের হয়। উদ্ভট টাইপ এর কালারের কোন ব্যানার থাকলে সে গুলোও সরিয়ে নিন আপাতত তারপর আবেদন করবেন।
- ব্লগ থেকে রোজগারের জন্য গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল এর নিয়মাবলী।
- কিভাবে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আপনার ইউটিউব চ্যানেল এর বৃদ্ধি কিভাবে ভালো যায়গাতে নিয়ে যাবেন। How to grow your youtube channel in 6 month’s.
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাথমিক ধারানা – Digital Marketing Concept Bangla
- অনলাইন রোজগারের প্রধান বাধা গুলি কি কি ? Main problems of online income
- ব্লগ্গিং কি এবং কিভাবে আপনাকে রোজগারের পথ দেখাবে ?
৪। এডসেন্স এর জন্যগুরুত্বপূর্ণ কিছু পেজ তৈরিঃ
ক) Privacy Policy পাতাঃ
এই কমন ভুলটি সকলেই করে থাকেন। গুগল সর্বদা একটি সাইটের Privacy Policy কে অনেক গুরুত্ত দেয়। এই প্রাইভেসি পলিসি পেজটিতে আপনার সাইটের ভিজিটর বা পাঠকদের কি করা উচিত এবং কি উচিত নয় তাছাড়া আপনার ব্লগে তারা কি কি তথ্য পাবেন এবং আপনি এই ব্লগটি কীভাবে ব্যবহার করেন এই সমস্ত তথ্য দিয়ে কিন্তু তৈরি করতে হয়। তাই সাধারণ ভাবে একটি Privacy Policy পাতা থাকা আপনি ইচ্ছে করলে অন্যের প্রাইভেসি পলিসি পেজ দেখে আপনি নিজের প্রয়োজন মত করে এই প্রাইভেসি পলিসি পেজ তৈরী করে নিতে পারবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্রাইভেসি পলিসি জেনারেটর ওয়েবসাইট আছে সেখান থেকেও কিন্তু আপনি এই প্রাইভেসি পলিসি পেজ তৈরি করে নিতে পারবেন।
খ) About Us পাতাঃ
About Us পাতাটিও আপনার সাইটে অ্যাডসেন্স আপ্প্রুভাল পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ। আপনার ওয়েবসাইটে এই About Us পেজটি না থাকলে আপনার অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। About Us পাতাটি মুলত আপনার বা আপনার সাইটের সম্পর্কে আলোচনা করে। কিভাবে এই সাইট টি তৈরী হলো , কে এই সাইটটি কে দেখাশোনা করেন এবং এই সাইটটি কি সম্পর্কিত এই সমস্ত বিষয় নিয়েই About Us পাতাটি তৈরি করা হয়।
তাই অবশ্যই অ্যাডসেন্সে আবেদন করার পূর্বে About US পেজ তৈরি করে নেবেন। আপনি দু একটা ওয়েবসাইটের About Us পেজ দেখবেন তাহলে কিন্তু একটা আইডিয়া পেয়ে যাবেন এবং আপনি নিজে নিজেই আপনার ওয়েবসাইটের এবাউট পেজ তৈরি করে নিতে পারবেন।
গ) Contact Us পাতাঃ
Contact-Us পেজটি হলো আপনার ভিজিটর এবং আপনার মধ্যে যোগাযোগের সেতুর মতো। এই পেজের মাধ্যমে ভিজিটর আপনার সাথে কন্টাক্ট করবেন এবং আপনি সেই ভিজিটরকে আপনার মত করে কেয়ার করবেন এটাই কন্টাক্ট পেজ এর মূল উদ্দেশ্য। আপনার মধ্যে এই যে কেয়ারিং ব্যাপারটা এটা কিন্তু গুগল এডসেন্স খুব পছন্দ করে। তাই অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট এ কন্টাক্ট পেজ থাকা বাধ্যতামূলক।
৫। অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কঃ
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক এর বিভিন্ন রকম এর শর্ত থাকে।ঠিক সেভাবেই গুগল এডসেন্স এর ও কিছু শর্ত আছে এবং অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম এরও কিছু শর্ত আছে।
এই শর্তগুলো কিন্তু সবসময় এক নাও হতে পারে তাই আপনি অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মের সাথে যখন গুগল এডসেন্স ব্যবহার করতে যাবেন তখন কিন্তু এই শর্তারোপের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং এই সমস্যা আপনার এডসেন্স এপ্রুভাল ক্ষেত্র কিন্তু প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু এই বিষয়টা একই রকম। তাই অ্যাডসেন্সে এপ্রুভালের আবেদনের পূর্বে আপনার ওয়েবসাইটে যত ধরনের বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম যুক্ত আছে সেগুলো সমস্ত অফ করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
অ্যাডসেন্স এবং ক্লিকসর একসাথে ব্যাবহার করা যায় না, কারন ক্লিকসর কনটেক্সচুয়াল এড যেটা এডসেন্স এর টার্মস বিরোধী। ইয়াহুর ব্যাপারটাও সেম। তাই অ্যাডসেন্সে এপ্লাই করতে হলে আপনাকে অবশ্য এই ধরণের এড গুলো সাইট থেকে রিমুভ করে নিতে হবে।
৬। টপ লেভেল ডোমেইনঃ
দ্রুত অ্যাডসেন্সে এপ্রুভালের জন্য অবশ্যই আপনার ব্লগটিকে একটি টপ লেভেল ডোমেইন এর উপর থাকতে হবে। সাবডোমেন বা ব্লগস্পট থেকে এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভাল এর দিন শেষ। এই সাব ডোমেইন /ব্লগ গুলোকে প্রায় স্পামি ভাবে।
তাই অ্যাডসেন্স আপ্রুভাল পেতে হলে আপনার ব্লগটি অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন হতে হবে যেমন com, net, org ইত্যাদি।
যাদের সাবডোমেইন বা ব্লগস্পটে ওয়েবসাইট আছে তারা অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন আপনাদের সাইটটিকে পরিবর্তন করে নিন।
অ্যাডসেন্সে দ্রুত এপ্রুভাল এবং ভিজিটরদের রেসপন্স দুদিক থেকেই কিন্তু আপনি এর ফলে সুবিধা পাবেন।
অ্যাডসেন্সে এপ্প্রুভল এর জন্য মূলত এই ৬টি বিষয় আপনাকে মেনে চলতেই হবে। এগুলোকেই মূল AdSense approval rule হিসেবে ধরা হয়। সাথে সাথেই আপনাকে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল।
৭। আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এডসেন্স এপ্রুভাল এর নিয়মাবলী :
- এডসেন্স আবেদনের জন্য আপনার সাইটে কতগুলি পোস্ট থাকতে হবে এর নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। তবে মোটামুটি ভাবে বলা যায় ২০থেকে ২৫ টি অরিজিনাল কনটেন্ট যুক্ত পোস্ট আপনাকে করতে হবে এবং আপনার ওই পোস্ট গুলো থেকে দর্শক এর মনের ওই বিষয় সম্পর্কে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যেন পূরণ হয়। অর্থাৎ পোস্ট টাকে সম্ভব সুন্দর করে সাজানো যায় সেভাবে সুন্দর করে সাজাতে হবে। পোস্ট এর মধ্যে ছবি , ভিডিও এবং ইনফোগ্রাফিক এর বাব্যহার থাকলে পোস্ট এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায় , এটাও খেয়াল রাখতে হবে। একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন এই পোস্টগুলো যেন ২৫০ থেকে 300 ওয়ার্ড এর নিম্নে না হয়।
- সাইটের বয়স বাড়তে দিন। আজকে সাইট খুলেই ১০/১২ টা লেখা দিলেন আর AdSence এপ্লাই করে ফেললেন সাথে এপ্রুভাল পাবেন এমন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসুন। কারণ অপরিপক্ক মা থেকে যেমন বাচ্চা আশা করা যায় না, তেমন-ই অপরিপক্ক সাইট থেকেও ভালো রেজাল্ট আশা করা যায় না। আপনার ওয়েবসাইটের বয়স এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
আরও জানুন : ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাথমিক ধারানা
- আপনার করা পোস্ট গুলোর মধ্যে বেশকিছু পোস্টে আপনি হাই সিপিসি (CPC) এবং হাই কম্পিটিটিভ (এডওয়ার্ড অনুযায়ী) কিছু কীওয়ার্ড টার্গেট করে পোস্ট করবেন। তবে কীবোর্ড গুলো অবসায় জেনো আপনার টপিক রিলেটেড হয়। এতে করে গুগল আপনার সাইটে এড দিতে বেশ আগ্রহী হবে। দ্রুত অ্যাডসেন্সের এপ্রুভাল (AdSence Approval) পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধে হবে।
- আপ্লাই করার পূর্বে অবশ্যই সব গুলো পোষ্ট যাতে সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোষ্ট গুলোকে নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া (বিশেষ করে গুগল প্লাস, টুইটার, ফেসবুক, স্টাম্বল, রেডিট, ফেসবুক, লিংকদিন ইত্যাদি ) এবং বুকমার্ক সাইট গুলোতে শেয়ার করতে হবে। এতে করে সাইটে ট্রাফিকও বেড়ে যাবে দিন দিন।
- পোস্টে অতিরিক্ত কিওয়ার্ড স্টাফিং করবেন না। একটা টার্গেটেড পেজের জন্য প্রাইমারি কিওয়ার্ড বাদে বাকি ৩ টা (সর্বোচ্চ) সেকেন্ডারি কিওয়ার্ড টার্গেট করবেন।বর্তমান প্রেক্ষাপটে মেটা কিওয়ার্ড নিয়ে না ভাবলেও চলবে।
- সেম ইন্টেনশনের ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড ফ্রেস টার্গেট করে লিখা যাবে না (যেমন good motherboard এবং best motherboard অনেকক্ষেত্রেই সেম ইন্টেন্ট এর । অনেকেই সিপিসি দেখে দুটো আলাদা আলাদা পোস্টের কথা ভাবতে পারেন । এতে ক্যানিনিবালাইজশেন প্রবলেমে এ পড়তে পারেন।
- আগে ধীরে ধীরে আপনার সাইটে ভিজিটর সংখ্যা বাড়ুক তারপর এডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন। ভিজিটর না থাকলে আপনার সাইটে কোনভাবেই অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল পাওয়া যাবে না। তাই অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভাল করার পূর্বে দেখে নেবেন যেন আপনার সাইটে একটু ভালো রকমের ভিজিটর প্রাত্যহিক আসতে থাকে।
উপরে আলোচিত ‘ AdSense approval rule ‘ গুলো সঠিক ভাবে ইমপ্লিমেন্ট করুন । তারপর এডসেন্স এ আবেদন করুন। যদি সবকিছু ঠিক ঠাক থাকে তাহলে আপনার অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।